১১ বছর পর ২য় পদ্মা সেতু নির্মাণে এগোচ্ছে সরকার

নিউজ ডেক্স: প্রায় ১১ বছর আগে করা পরিকল্পনার সেতু নির্মাণের কাজ ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের বাজেটের আগেই দ্বিতীয় পদ্মা-সেতু প্রকল্পের চূড়ান্ত জরিপ-প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় সরকার। যা হবে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে। এতে করে বিপুল সুবিধা লাভ করবে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ, দোহার-চরভদ্রাসন, মাওয়া-জাজিরা ও চাঁদপুর-ভেদরগঞ্জ। প্রথম পদ্মা-সেতুর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই এগোচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সবকিছু ঠিক থাকলে পাটুরিয়া- গোয়ালন্দ পয়েন্টে আগামী বাজেটের আগেই চূড়ান্ত জরিপ-প্রক্রিয়া শেষ হবে দ্বিতীয় পদ্মা-সেতু। এরই মধ্যে বহুল-আলোচিত পদ্মাসেতুর কাজ ৮২ শতাংশ শেষ হয়েছে। আর মূল সেতুর অগ্রগতি হয়েছে ৯১ শতাংশ। এরই মধ্যে প্রায় ১১ বছর আগে করা প্রাথমিক পরিকল্পনা মোতাবেক দ্বিতীয় পদ্মাসেতুর আলোচনে হচ্ছে তুঙ্গে। এই দ্বিতীয় পদ্মা-সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে সুবিধা পাবে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ, দোহার-চরভদ্রাসন, মাওয়া-জাজিরা ও চাঁদপুর-ভেদরগঞ্জ। এগুলোর মধ্যে মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে দেশের বৃহত্তম পদ্মা-বহুমুখী সেতু বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
এবার ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটের আগেই দ্বিতীয় পদ্মা-সেতু প্রকল্পের চূড়ান্ত জরিপ প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় সরকার। এই লক্ষ্যে নতুন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) নিয়ে এরই মধ্যে কাজ করছে সেতু-বিভাগ। তাদের সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে সম্মতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তবে সরকার একক বা যৌথ-অর্থায়নকারী হিসেবে কোন সংস্থাকে বেছে নেবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এই বিষয়ে বিশ্ব-ব্যাংক ও এডিবির সঙ্গে সরকারের একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত দ্বিতীয়-পদ্মাসেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার। এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত-ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ১২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের-প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে অনুমোদন করেছেন। প্রথম দিকে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। পরে এর দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয় ৩ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। তবে এই ব্যয় আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, কোনো অর্থায়নকারী স্বেচ্ছায়-এগিয়ে না এলে নিজস্ব অর্থায়নেই হবে দ্বিতীয় পদ্মাসেতু; এমন পরিকল্পনাই রয়েছে সরকারের। প্রয়োজনে রিজার্ভের অর্থও কাজে লাগানো হতে পারে। আবার পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতেও এগোতে পারে সরকার। সরকার একাধিক-সম্ভাব্য বিকল্প রেখেই এগোচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পদ্মাসেতু প্রকল্পের-পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথম পদ্মাসেতু জন’সাধারণ ও সরকারের বিরাট স্বপ্ন। সেটা এখন প্রায় শতভাগ বাস্তব রূপ নিয়েছে। দ্বিতীয়-পদ্মাসেতুর ব্যাপারেও অনেক দিন আগে থেকেই সরকার পরিকল্পনা করছে। এটাও হবে একটি নতুন স্বাপ্নিক প্রকল্প।
উল্লেখ্য, প্রথম-পদ্মাসেতুর প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির-অভিযোগের মিথ্যা-অপ্রীতিকর অবস্থা টেনে তাদের অর্থায়ন প্র’ত্যাহার করে। তার ফল’শ্রুতি এডিবিসহ সকল অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে সরকার কিছুটা অ’স্বস্তির মাঝে পড়ে যায়। তাই এসব দিকে বিবেচনায় এবার সরকার সম্পূর্ণ ধীর-গতিতে দ্বিতীয় পদ্মাসেতু নির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছে। যাতে আরো নতুন করে অ-প্রীতিকর পরিস্থিতে পড়তে না হয়।
অন্যদিক প্রথম পদ্মাসেতুর মতো দ্বিতীয় পদ্মাসেতু বাস্তবায়নেও প্রযুক্তি’গত সহায়তা দিয়ে পাশে থাকতে চায় চীন। এই নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চীন সরকারের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় পদ্মাসেতু নির্মিত হলে রাজধানী-ঢাকার সঙ্গে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও রাজবাড়ীর সড়ক যোগাযোগের দূরত্ব কমে আসবে। গোপালগঞ্জ, যশোর ও মাদারীপুর জেলার অংশ-বিশেষের দূরত্বও কমবে।